মৌসুমের শুরুতে পাটের দাম ভালো পেলেও বর্তমানে সেই হার কমতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে উঠতে শুরু করেছে পাট। কিন্তু উৎপাদিত পাটের মূল্য নিয়ে হতাশ চাষিরা, কারণ মৌসুমের শুরুর দিকে ভালো দাম পেলেও এখন তা নিম্নমুখী হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার কয়েকটি পাটের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাট বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি সর্বোচ্চ ১,৯৫০ টাকা দরে, যা ঈদের আগেও বিক্রি হয়েছিল ২২শ’ টাকা দরে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর চতুল ইউনিয়নের পাট চাষি আতিয়ার রহমান, সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, এক মণ পাটের উৎপাদন খরচ ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা পড়েছে। কারণ পাট উৎপাদন মৌসুমে ডিজেল ও শ্রমিকের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এছাড়া পাট পঁচাতে চাষিদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে পর্যাপ্ত পানির অভাবে। যার কারণেই পাটের রং ভালো থাকছে না।
পাট চাষিরা জানান, পাট উৎপাদনে ব্যয়ের সঙ্গে আনুপাতিক হারে পাটের মূল্য না থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
জেলার পাটের বাজার খ্যাত কানাইপুর, তালমা, কাদিরদী, সাতৈর গিয়ে দেখা যায়, বর্তমান ১৫শ’ থেকে শুরু করে ১,৯৫০ পর্যন্ত দরে মণ প্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে।
চাষিদের দাবি, মণ প্রতি ২২শ থেকে ২৫শ টাকা হারে দাম পেলে তাদের লাভ হতো। অন্যদিকে সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা যায় সর্বোচ্চ দাম দেয়া হচ্ছে ১,৮৫০ টাকা প্রতি মণ।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, এ বছর জেলায় মোট পাটের আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে পাটের উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। ফরিদপুর জেলায় দুই জাতের (তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশী জাত) পাটের আবাদ হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই তোসা জাতের।
তিনি বলেন, পানির অভাবে জেলার অনেক এলাকার চাষিরা ভালো করে পাট পঁচাতে পারেনি, এর কারণে পাটের রং ভালো হয়নি। এতে চাষিরা উৎপাদিত পাটের দাম কম পাচ্ছে।
এদিকে ফরিদপুরের এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেডের পরিচালক মোহাসিন হোসাইন জানান, মৌসুমের শুরুতে তারা ২২শ’ বা তারও বেশি দরে পাট কিনেছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে যে মানের পাট আসছে তাতে সর্বোচ্চ ১,৯৫০ টাকার বেশি দেয়া যাচ্ছে না।
পাট পণ্য বহুমাত্রিক না হলে বর্তমান পাটের মূল্যে চাষিদের প্রত্যাশা পূরণ হওয়া কঠিন বলে বলে মনে করছেন তিনি।